অপরাধ সূত্র :
অনিয়ম, দুর্নীতি এবং আস্থাহীনতায় তীব্র তারল্য সংকটে পড়েছে অন্তত এক ডজন ব্যাংক। এর মধ্যে কয়েকটি ব্যাংকের অবস্থা খুবই নাজুক। রোববার যুগান্তরের খবরে প্রকাশ, বাংলাদেশ ব্যাংক ছাড়াও এসব ব্যাংক প্রতিদিন একে অপরের কাছ থেকে নগদ টাকা ধার করে চলছে। আন্তঃব্যাংকের ধারের এ পদ্ধতিকে ব্যাংকিং ভাষায় কলমানি মার্কেট বলা হয়। সেই কলমানি মার্কেটে সুদহার লাফিয়ে বাড়ছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতি কমাতে সুদহার বাড়ানোকে অন্যতম কৌশল হিসাবে ব্যবহার করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সে কারণেই চলতি অর্থবছরের (২০২৩-২৪) শুরু থেকেই সুদহারের সর্বোচ্চ সীমা প্রত্যাহার করা হয়েছে। যার সরাসরি প্রভাব কলমানি মার্কেটে দ্রুত পড়েছে। বৃহস্পতিবার লেনদেন হওয়া প্রায় সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকার কলমানির সুদহার ছিল ৯ দশমিক ৩৭ শতাংশ। গত বছরের এ সময়ে যা ছিল ২ দশমিক ৭২ শতাংশ।
১৯৮০-এর দশকের গোড়ার দিকে কলমানি বাজার চালু হয়। সাধারণত নগদ টাকার চাহিদা বাড়লে কলমানির চাহিদা বাড়ে এবং তারল্য সংকট কমলে কলমানির চাহিদা কমে যায়। দেখা যাচ্ছে, চাহিদা তো কমেইনি বরং গত দুই বছরের ব্যবধানে কলমানির গড় সুদহার সাড়ে ৬ শতাংশ ছাড়িয়েছে, স্বভাবতই যা বিনিয়োগ, উৎপাদন ও কর্মসংস্থানের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। সূত্র বলছে, ব্যাংকগুলোর আমানতের প্রবৃদ্ধি তুলনামূলক ধীর। আবার অধিকাংশ ব্যাংক ডলার কিনতে প্রচুর নগদ টাকা খরচ করেছে। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ব্যাংক গত ৬ মাসে প্রায় ৬ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করে টাকা বাজার থেকে তুলে নিয়েছে। এতে ব্যাংকগুলো তারল্য সংকটে পড়েছে। নগদ টাকার চাহিদা পূরণ করতে কলমানিতে ঝুঁকছে ব্যাংকগুলো।
আমরা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছি, দেশের ব্যাংক খাত নানা সংকটে জর্জরিত। এসব সংকটের সূত্রপাতও বহুদিন ধরে। দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোয় এতদিন ছিল ডলার সংকট; এখন টাকার সংকটেও ভুগছে। ফলে ব্যাংকগুলোয় তারল্য সংকট উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। গত বছরের শেষদিকে ব্যাংক থেকে গ্রাহকদের টাকা তুলে নেওয়ার প্রবণতা কমেছে; বেড়েছে আমানত প্রবাহ। এরপরও ব্যাংকগুলোয় তারল্য সংকট কেন বাড়ছে, তা খতিয়ে দেখা দরকার। সবচেয়ে বড় উদ্বেগ হলো, কয়েকটি ব্যাংকের কিছু পরিচালকের অনৈতিক হস্তক্ষেপের কারণে দুর্নীতির প্রসার ঘটেছে। জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে ব্যাংক থেকে বেরিয়ে গেছে হাজার হাজার কোটি টাকা। ব্যাংক ঋণ হিসাবে যেসব অর্থ বিতরণ হয়েছে সেগুলো আর ফেরত আসছে না। এমনকি সুদ বাবদ অর্থও আসছে না। অর্থ পাচারের কারণে এ সংকটগুলো তীব্র আকার ধারণ করছে।
গত বছরের জুলাই থেকে ব্যাংকগুলোয় ডলার সংকট দেখা দেয়। বছর শেষে তা আরও বাড়ে। এ প্রেক্ষাপটে ব্যাংকগুলো সংকট মোকাবিলায় যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে তাতে সুফল পাওয়া যায়নি; যে কারণে চলতি বছরের শুরুতে ডলার সংকট প্রকট আকার ধারণ করে। আবার গত অর্থবছর এবং চলতি অর্থবছরে ডলার ক্রয়ের বিপরীতে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে চলে গেছে বিপুল পরিমাণ নগদ অর্থ। এসব কারণেও ব্যাংকগুলোয় তারল্য সংকট বেড়েছে। এ অবস্থায় ব্যাংক খাতের চিহ্নিত সমস্যাগুলো সমাধানে পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রতিষ্ঠা করতে হবে সুশাসন। দুর্নীতি ও রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করার পদক্ষেপের মাধ্যমে ব্যাংক খাত আবারও শক্তিশালী হবে, এটাই প্রত্যাশা।