চলতি মওসুমে ২ হাজার মেট্টিক টন মধু উৎপাদনের লক্ষ্য

Shafiul
প্রতিবেদন প্রকাশ: ১৭ জানুয়ারি ২০২৪ | সময়ঃ ০৩:২৮
photo

অপরাধ সূত্র :

উত্তরাঞ্চলের আট জেলায় বেড়েছে সরিষা আবাদ। বিস্তৃর্ণ বিলের যতদূর চোখ যায় হলুদের সমারহ। মৌ বাক্স থেকে বেরিয়ে হলুদ ফুলের ডগায় বসে মধু আহরণ করছে মৌমাছির দল। এভাবে গত তিন বছরে উল্লেখযোগ্য হারে সরিষা আবাদের সাথে মৌমাছি দিয়ে বেড়েছে মধু উৎপাদনও।

সরিষার ফুল কাজে লাগিয়ে খেতের আইলে শত শত মৌবাক্স বসিয়ে বাণিজ্যিকভাবে মধু উৎপাদন করছেন মৌয়ালরা। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে উত্তরাঞ্চলের মধু যাচ্ছে সারাদেশে। বিভিন্ন বেসরকারি কোম্পানির কাছেও বেশ গুরুত্ব পাচ্ছে এই মধু। চলতি মওসুমে রাজশাহী এবং বগুড়া অঞ্চলের ৭ জেলায় ৩ লাখ ৫০ হাজার ৭৬৯ হেক্টর সরিষা খেতে প্রায় ২ হাজার মেট্রিকটন মধু উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।

 

সরিষা আবাদের সঙ্গে বেড়েছে মধু উৎপাদন

কৃষি অধিদপ্তরের রাজশাহী ও বগুড়া আঞ্চলিক অফিসের হিসেব মতে, ২১-২২ মওসুমে বগুড়া অঞ্চলের জয়পুরহাট, বগুড়া, পাবনা ও সিরাজগঞ্জ জেলায় ১ লাখ ২৬ হাজার ৪৪৭ হেক্টর সরিষা খেতে মধু উৎপাদন হয় ৪ লাখ ২২ হাজার ২৪৩ কেজি। ২২-২৩ মওসুমে মধু উৎপাদন হয় ১ লাখ ৯৪ হাজার ৭৮৪ কেজি। আগের দুই বছরের তুলনায় চলতি মওসুমে ৬৮ হাজার ৩২৭ হেক্টর জমিতে বেড়েছে সরিষার আবাদ। একইসঙ্গে মধু উৎপাদন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৩৫ হাজার ৭৭৭ কেজি। সব মিলিয়ে এই অঞ্চলে এবার ১ লাখ ৯৪ হাজার ৭৮৪ হেক্টর জমির সরিষায় ১ হাজার ১০০ মেট্রিকটন মধু উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।

এ ছাড়া রাজশাহী অঞ্চলের রাজশাহী জেলায় চলতি মওসুমে ৭৭ হাজার ৩৫০ হেক্টর সরিষার জমি থেকে মধু আহরণ লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৮৬ হাজার ৫৪০ কেজি। এই জেলায় ২০২৩ মওসুমে ৪২ হাজার ৫৫৩ হেক্টরে মধু উৎপাদন হয় ৪৯ হাজার ৮৮৫ কেজি এবং ২২ মওসুমে ২৬ হাজার ১৫৬ হেক্টরে মধু উৎপাদন হয় ২১ হাজার ২৭৭ কেজি। হিসেব মতে, চলতি মওসুমে নওগাঁ জেলায় ১ লাখ ২০ হাজার ৪৬০ কেজি, আগের মওসুমে ১৬ হাজার ৮০ কেজি, ২২ মওসুমে ৩২ হাজার ৭৩০ কেজি এবং চলতি মওসুমসহ গত তিন বছরে নাটোর জেলায় মধু উৎপাদন হয়েছে ৩৪ হাজার ১৬৫ কেজি মধু উৎপাদন হয়েছে। কৃষি বিভাগের রেকর্ড অনুযায়ী, এই অঞ্চলে গত তিন বছরে ১৬ হ্জাার ৩৩৭ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ বেড়েছে। মধু উৎপাদন বেড়েছে ৬১ হাজার ৭৩৭ কেজি।

 

সরেজমিন ঘুরে

রোববার বিভিন্ন বিলে গিয়ে দেখা যায়, দিগন্তজোড়া সরিষার খেতে শত শত মৌবাক্স বসানো। প্রতিটি ছোট দলে অন্তত ৫ জনকে শ্রমিক মধু সংগ্রহের কাজ করছেন। মৌমাছির দল সরিষা ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে চাষির বাক্সে জমা করছে। মধু আহরণ, সংরক্ষণসহ নানমুখী কাজে ব্যস্ত থাকতে দেখা গেছ মৌয়ালদের।

 

যেভাবে মধু সংগ্রহ করা হয়

কাঠ দিয়ে বিশেষ কায়দায় মধু সংগ্রহের বাক্স তৈরি করা হয়েছে। রোদ-বৃষ্টিতে মাছির মধু সংগ্রহ অব্যহত থাকে। কালো রঙের পলিথিন ও পাটের চটে বাক্সগুলো মুড়িয়ে রাখা হয়েছে। বাক্সে মৌমাছির অবাধ চলাচলের জন্য পথ রয়েছে। বাক্সে বিশেষ কৌশলে রানী মৌমাছিকে আটকে রাখা হয়। মূলত রানীর টানেই অন্য মাছি মধু সংগ্রহ করে বক্সে ফিরে। প্রতিটি মৌবাক্সে ৭ থেকে ১০টি কাঠের ফ্রেমে মধু সঞ্চয় করে মাছিদল।

 

মৌয়ালরা জানালেন

গুরুদাসপুরের মৌচাষি দিগন্ত মন্ডল ইত্তেফাককে জানান, বছরের ছয়মাস বাক্সের মাধ্যমে মধু সংগ্রহ করেন তারা। অন্য সময় চিনির রস খাইয়ে মৌমাছি রাখা হয়। পরে রবি মওসুমে এসে সরিষা, লিচু, বড়ই, কালোজিরা, ধনিয়া ফুলে মধু উৎপাদন হয়। এর মধ্যে সরিষা এবং কালোজিরার মধুর চাহিদা বেশি। এই মওসুমে তিনি চলনবিলের রুহাই বিলে শতাধিক মৌবাক্স বসিয়েছেন।

তার ভাষ্যমতে, একশ বাক্স থেকে সপ্তাহে তিনি ৩০০ থেকে ৩২০ কেজি মধু সংগ্রহ করেন। বর্তমানে খুচরা পর্যায়ে মাণভেদে প্রতি কেজি মধুর দাম ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা। তবে পাইকারদের কাছে কম দামে মধু বিক্রি করতে হচ্ছে।  

রাজশাহী অঞ্চলের মৌচাষি বিল্লাল হোসেন ইত্তেফাককে জানালেন, তারা সরিষা খেত থেকে মধু উৎপাদন করছেন ঠিকই কিন্তু কাঙ্খিত দাম পাচ্ছেন না। বছরের ডাল সময়ে প্রায় ১২ থেকে ১৫ লাখ টাকা ব্যয় হয় মৌমাছি ধরে রাখতে। অথচ মওসুমে মধু উৎপাদন করে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা কেজি পাইকারি দরে বিক্রি করতে হচ্ছে। পাইকারি পর্যায়ে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায় বিক্রি করতে পারলে মৌচাষে ব্যাপক সম্ভাবনা তৈরি হতো।

মৌচাষি সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক দিলিপ মণ্ডল ইত্তেফাককে বলেন, স্থানীয় কৃষি অফিসের মাধ্যমে বিসিক থেকে মৌচাষের ওপর প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। তিনি এলাকায় ৪০টির মতো মৌ খামার গড়ে তুলেছেন। এতে অনেকেরই বেকারত্ব দূর হয়েছে।

রাজশাহী আঞ্চলিক কৃষি অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক মো. শামসুল ওয়াদুদ ইত্তেফাককে বলেন, সরিষা আবাদ বৃদ্ধি অব্যহত আছে। সঙ্গে বাড়ছে মধু উৎপাদনও। এতে করে বেকারত্ব কমছে।

  • নিউজ ভিউ ৩৪