চাকমা সার্কেল চীফের বিতর্কিত সংশোধনী প্রস্তাব নাকচের দাবীতে সাংবাদিক সম্মেলন - পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ

Shafiul
প্রতিবেদন প্রকাশ: ১৫ ডিসেম্বার ২০২৪ | সময়ঃ ১০:০৭
photo

অপরাধ সূত্র :


চট্টগ্রাম ব্যুরো:
চাকমা সার্কেল চীফের বিতর্কিত সংশোধনী প্রস্তাব নাকচের দাবীতে সাংবাদিক সম্মেলন করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ এর লিগ্যাল এইড কমিটি। 
রবিবার ( ১৫ ডিসেম্বর) দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব হলে এ সংবাদ সম্মেলন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলেন বাংলাদেশের ভবিষ্যত সংবিধানে রাস্ট্রধর্ম হিসেবে ইসলামকে বাদ দেয়া এবং বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকারী সেটেলার উপজাতীয়দের 
আদিবাসী হিসেবে সংবিধানে স্বীকৃতি দিতে সংবিধান সংশোধন কমিশন এর নিকট ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের বিরুদ্ধে অবস্থাানকারী রাজাকার চাকমা সার্কেল চীফ ত্রিদিব রায়ের সন্তান দেবাশীষ রায় ২৭ নভেম্বর ২০২৪ এ প্রদত্ত এর সংবিধান সংশোধন প্রস্তাব রাস্ট্রদ্রোহিতা 
ছাড়া কিছুই নয় । তাই আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ করছি এবং সে সংশোধনী নাকচ করার জন্য সংবিধান সংশোধন কমিশন এর প্রতি আহবান জানাচ্ছি ।
এ প্রস্তাব এমনভাবে দেয়া হয়েছে, তাতে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিমদের পাশাপাশি হিন্দু মুসলিম বৌদ্ধ খ্রিস্ট্রান সকল ধর্মকে অস্বীকার করা হয়েছে । এমনভাবে প্রস্তাব দেয়া হয়েছে যেন পার্বত্য এলাকার ১৫ লক্ষ মানুষের জন্যই সংবিধানটি রচনা করতে হবে । অথচ ১৮ 
কোটি মানুষের জন্যই এ সংবিধান । দেবাশীষ রায় এর রাস্ট্রধর্মহিসেবে ইসলাম বাতিলের প্রস্তাব এ দেশের ৯০ শতাংশ মুসলমানদের আহত করেছে । 
জাতিসংঘের আদিবাসী বিষয়ক ঘোষণাপত্র ২০০৭ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের ৬১তম অধিবেশনে আদিবাসী বিষয়ক একটি ঘোষণাপত্র উপস্থাপন করা হয়। এ ঘোষণাপত্র উপস্থাপন করলে ১৪৩ টি দেশ প্রস্তাবের পক্ষে, ৪টি দেশ বিপক্ষে, ১১টি দেশ ভোট দানে বিরত এবং ৩৪টি দেশ অনুপস্থিত থাকে। ভোট দানে বিরত থাকা দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। বিরুদ্ধে ভোট দেওয়া দেশগুলো 
হচ্ছে- অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, নিউজিল্যান্ড ও যুক্তরাষ্ট্র। এই ঘোষণাপত্রে সর্বমোট ৪৬টি অনুচ্ছেদ রয়েছে। এসব অনুচ্ছেদের বেশ কয়েকটি ধারা বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব, অখ-তা, অস্তিত্ব, কর্তৃত্ব, সংবিধান ও আত্মপরিচয়ের সাথে সরাসরি সাংঘর্ষিক।
তাই বাংলাদেশ হতে পার্বত্য চট্টগ্রাম কে বিচ্ছিন্ন করতে প্রতিটি প্রস্তাবে ”আদিবাসী” শব্দ জুড়ে দেয়া হয়েছে অথচ পার্বত্য উপজাতীয়দের 
নেতা সন্তু লারমা ১৯৯৭ সালের পার্বত্য চুক্তিতে নিজেদের উপজাতি হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ের পার্বত্য চুক্তি সম্পাদন করেছেন । সেখানে উপজাতীয় নেতা সন্তু লারমা স্বাক্ষর করে উপজাতীয় হিসেবে নিজেদের স্বীকৃতির সনদ দিয়েছেন । আর দেবাশীষ রায় সে চুক্তি সংবিধানে 
স্থাান দিতে বলেছেন । তাহলেতো বিষয়টা ডাবল স্ট্যান্ডার্ড হয়ে গেল ।
২০০০ সালের আগে উপজাতীয়রা নিজেদের জাতি বা আদিবাসী দাবী করেননি কিন্তু তারপর হতে তারা নিজেদের আদিবাসী দাবী করা 
ষড়যন্ত্রের নামান্তর । তাছাড়া বিষয়টা মহামান্য অ্যাপীলেট ডিভিশনে রিভিউ পিটিশন নং ৫৪/২০১৮ ও রিভিউ পিটিশন নং ৫৭/২০১৮ 
মূলে বিচারাধীন রয়েছে । তাই এই রিভিউ পিটিশন এর রায় না হওয়া পর্যন্ত আদিবাসী বা হিল ট্যাক্ট ম্যানুয়েল ১৯০০ নিয়ে সংবিধান সংশোধন কমিশন কোন সংশোধন করতে পারবেন না ।
তাই সার্কেল চীফ দেবাশীষ রায় এর সংবিধান সংশোধন প্রস্তাব পুরোপুরি বাতিলের দাবী জানায় পার্বত্য বাসী । 
পার্বত্যবাসী  সংবিধান সংশোধন কমিশন এর নিকট ১১ টি দাবী তুলে ধরেন -
১ । বাংলাদেশের এক দশমাংশ এলাকা বিধায় জনসংখ্যা কম হলেও পার্বত্য তিন জেলায় ১০ টি সংসদীয় আসন দাবী করে ।
২। পার্বত্য বাঙালিরা অনগ্রসর ও পার্বত্য এলাকার সার্বভৌমত্ব রক্ষায় জীবন দানকারী তাই তাদের জন্য ব্যবসা চাকরী শিক্ষা ভূমির 
অধিকার রক্ষায় বিশেষ বিধান সংযোজন করা । পার্বত্য বাঙালিদের অনগ্রসর জাতি ঘোষণা করা । 
৩। উপজাতীয়দের মধ্যে চাকমা উপজাতি অগ্রসর বিধায় তাদের অগ্রসর উপজাতি ঘোষণা করা । 
৪ । স্বাধীনতা যুদ্ধের বিরুদ্ধে ও ২০২৪ এর আগষ্ট আন্দোলনের বিরুদ্ধে অবস্থাান নেয়ায় এবং রাস্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করায় চাকমা সার্কেল 
বিলূপ্ত করা । 
৫ । পার্বত্য এলাকায় স্থাায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠায় পার্বত্য বাঙালিদের সকল স্থানীয় শাসনে অর্šÍভুক্ত করা । পার্বত্য বাঙালিদের জন্য একজন 
পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রী সকল সরকারে পার্বত্য বাঙালি হতে নিয়োগ প্রদান করা ।
৬। পার্বত্য অঞ্চল কে বিশেষ পর্যটন অঞ্চল , শিক্ষা ও চিকিৎসা অঞ্চল ঘোষণা করে তার উন্নয়নের জন্য সংবিধানে বিশেষ বিধান সংযুক্ত 
করা ।
৭। ৩৫০০০ হাজার বাঙালি পাবর্ত্য চট্টগ্রাম রক্ষায় জীবন দিয়েছে তাদেরকে স্বাধীনতা যুদ্ধের শহীদ মুক্তিযোদ্ধার সম্মান ও স্বীকৃতি সংবিধানে 
অর্šÍভুক্ত করা, আহতদের স্বীকৃতি ও পূনবার্সন ও দায়ীদের জন্য ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠা করে বিচার করা বা প্রচলিত ট্রাইব্যুনালে বিচার করা 
। ও একটি দিন তাদের জন্য জাতীয় দিবস ঘোষণা করা ।
৮। পার্বত্য অঞ্চল বাংলাদেশের অবিচ্ছেদ্য অংশ ঘোষনা করে দেশের প্রচলিত সকল আইন ও অধিকার পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রতিষ্ঠা করা । 
হিল ট্র্যাক্ট ম্যানুয়েল ১৯০০ সহ ব্রিট্রিশ উপনিবেশিক সকল আইন রহিত করা । 
৯। পার্বত্য মন্ত্রণালয় সকল সম্প্রদায়ের জন্য উন্মুক্ত করা ।
১০ । পার্বত্য অঞ্চল কে বিশেষ অঞ্চল ঘোষণা করে তার পাশ^বর্তী সীমানা কাটাঁতারের বেড়া দিয়ে ঘেরাও করে দেশের সীমানা চিহ্নিত 
করার বিশেষ বিধান সংবিধানে সংযুক্ত করা ।
১১। বিশেষ উন্নয়ন অঞ্চল ঘোষণা করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনার বিশেষ বিধান সংবিধানে সন্নিবেশিত। 
লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ লিগ্যাল এইড কমিটি চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট পারভেজ তালুকদার , আরো বক্তব্য রাখবেন , ইসলামী আন্দোলন চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতি জননেতা আলহাজ্ব জান্নাতুল ইসলাম, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক প্রফেসর ড. বেলাল নূর আজিজী,  সাংবাদিক ও কলামিস্ট  কামাল পারভেজ, সিনিয়র সাংবাদিক আবু বকর ছিদ্দিক, বৈষম্যবিরোধী যুব আন্দোলন নেতা মো মনছুরুল হাসান, জাতীয় নাগরিক কমিটির চট্টগ্রাম লিগাল উইং সদস্য এডভোকেট ইয়াসিন আরাফাত সাজ্জাদ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্রনেতা আরশাদ হোসেন মুন্না প্রমূখ।

  • নিউজ ভিউ ৯৪