জাপার শীর্ষ নেতৃত্বের ‘নৈতিকতা’ নিয়ে দলেই প্রশ্ন

নিউজ ডেস্ক | /APARADHSUTRA.COM

প্রতিবেদন প্রকাশ: ১৬ জানুয়ারি ২০২৪, সময়ঃ ০৭:৪৭


তৃণমূলের অমত সত্ত্বেও নির্বাচনে যাওয়ায় জাতীয় পার্টির (জাপা) শীর্ষ নেতৃত্বের ‘নৈতিকতা’ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে দলটির নেতাদের একটি অংশ। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী জাপার পরাজিত প্রার্থীদের এক সভায় নেতারা এ প্রশ্ন তোলেন। তাঁরা মন্তব্য করেন, নির্বাচনে গিয়ে জাপা জাতির সঙ্গে বেইমানি করেছে। নির্বাচনে অংশ না নিলে জি এম কাদের জাতির কাছে নায়ক হতেন।

গতকাল রোববার রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে জাপার পরাজিত কয়েকজন প্রার্থীর নেতৃত্বে বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীদের মতবিনিময় সভায় কয়েকজন নেতা এসব মন্তব্য করেন।

নির্বাচনে জাপার ভরাডুবির পর দলের শীর্ষ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ‘অসহযোগিতার’ অভিযোগে পরাজিত প্রার্থীদের কয়েকজন এই সভার আয়োজন করেন। সভায় অন্তত ১০ জন প্রার্থী বক্তব্য দেন। তাঁরা জাপার চেয়ারম্যান জি এম কাদের ও মহাসচিব মুজিবুল হকের বিরুদ্ধে অসহযোগিতাসহ নির্বাচনে জাপার অংশগ্রহণ কতটা নৈতিক ছিল, সে প্রশ্ন তোলেন।প্রসঙ্গত, ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়ার প্রশ্নে তৃণমূলের মতামত জানতে গত ১৪ নভেম্বর রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে জাপার কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির জরুরি সভা হয়। ওই সভায় ৬২ জেলার ৫৯ জন নেতা বক্তব্য দেন। এর মধ্যে ৫৭ জন নেতা আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতার নির্বাচনে আর না যাওয়ার পক্ষে মত দিয়েছিলেন।

সভায় জি এম কাদের বলেছিলেন, ‘আমি নেতাদের আবেগ বুঝলাম, তাঁদের মতামত জানলাম। দেশ ও জনগণের চাহিদা মোতাবেক আমরা সিদ্ধান্ত নেব।’

সে দিনের তৃণমূলের মতামতের উল্লেখ করে গতকাল নোয়াখালী-৩ আসনের জাপার পরাজিত প্রার্থী ফজলে এলাহী বলেন, ‘আপনি (জি এম কাদের) তৃণমূলের সভায় আল্লাহর ভয় দেখিয়ে বললেন, বেইমান হব না। তৃণমূল যা চায়, সে মোতাবেক সিদ্ধান্ত নেব। আপনি কথা রাখেননি। আমরা জাতির সঙ্গে বেইমানি করেছি।’

গতকালের সভায় জাপার কো–চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেনের (ঢাকা-৪ আসনের প্রার্থী) সভাপতিত্বে ১০ জন পরাজিত প্রার্থী বক্তব্য দেন। এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের লিয়াকত হোসেন, সিলেট-২ আসনের ইয়াহ ইয়া চৌধুরী, ঢাকা-১৩ ও ঢাকা-১৪ আসনের প্রার্থী শফিকুল ইসলাম ও কিশোরগঞ্জ-৬ আসনের প্রার্থী নুরুল কা‌দের উল্লেখযোগ্য। প্রার্থীর বাইরে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারাও সভায় বক্তব্য দেন।


বক্তব্যে জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য শফিকুল ইসলাম দলের চেয়ারম্যানের কড়া সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ‘আপনারা ২৬ জন সমঝোতা করেছেন। সিটও পেয়েছেন, অর্থও পেয়েছেন। ১৭ তারিখের আগে যখন দেখলেন নিজের বউয়ের (শেরীফা কাদের) আসন কনফার্ম (নিশ্চিত) নয়, তখন বললেন নির্বাচনে যাব কি না, ঠিক নেই। যেই নিজ স্ত্রীর আসন কনফার্ম, তখন বললেন নির্বাচনে যাব।’

স্ত্রীর জন্য দলের প্রভাবশালী নেতাদের জবাই করার অভিযোগও করেন শফিকুল ইসলাম। তিনি জাপার চেয়ারম্যানকে হুঁশিয়ারি জানিয়ে বলেন, ‘আজকে যদি আঘাতপ্রাপ্ত ও বহিষ্কৃত সবাই এক হয়ে যায়, তাহলে আপনার (জি এম কাদের) টিকে থাকা কঠিন হয়ে যাবে।’

সা‌বেক সংসদ সদস্য ইয়াহ ইয়া চৌধুরী ব‌লেন, ‘আপ‌নি গণতন্ত্র শিখিয়েছেন, আপনার মধ্যেই গণতন্ত্র নেই। আপনি স্ত্রীর জন‌্য ফি‌রোজ রশীদ, বাবলা (আবু হোসেন), খোকা (লিয়াকত হোসেন), পীর ফজলুর রহমান, আতিকুর রহমানসহ ৯–১০টি সিট কোরবানি দিয়েছেন। সমঝোতার আসনের জন‌্য চেয়ারম‌্যান নি‌জের স্ত্রী, না‌তি আর মে‌য়ের ভাশুরের জন‌্য দৌড়াদৌড়ি ক‌রে‌ছেন।’

আরেক প্রার্থী নুরুল কা‌দের ব‌লেন, ‘আমরা সবকিছু দি‌য়ে নির্বা‌চন ক‌রে‌ছি। একটু খবর নেয়‌নি, দশটা টাকা দেয়‌নি। আর কত মাথা বি‌ক্রি কর‌বেন। নির্বাচন আস‌লে আর মাথা বি‌ক্রি কর‌বেন না।’

এ ছাড়া সভায় অন্য বক্তারা দলের দুই প্রধান নেতার বিরুদ্ধে নির্বাচনে আর্থিকভাবে সহযোগিতা না করা, ফোন না ধরাসহ বিভিন্ন অভিযোগ করেন।

এই সভার পর জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য শফিকুল ইসলাম ও ভাইস চেয়ারম্যান ইয়াহ ইয়া চৌধুরীকে দলীয় সব পদপদবি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। গতকাল দলের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, জাপার মহাসচিবের সুপারিশক্রমে জাপার ঢাকা মহানগর উত্তরের কমিটি বিলুপ্ত করেন চেয়ারম্যান জি এম কাদের।

তবে বিভিন্ন অভিযোগের বিষয়ে জি এম কাদের প্রথম আলোকে বলেন, ‘যারা বলছে আমরা টাকা পাইছি, টাকা যে পাইছি এর সাক্ষী-প্রমাণ কী। বললেই হলো টাকা পাইছি। আর নির্বাচনের জন্য কাউকে তো ডেকে আনা হয়নি। তখনই বলা হয়েছিল, পার্টি কোনো আর্থিক সহযোগিতা করতে পারবে না। যাঁদের আগ্রহ ছিল, তাঁরা নির্বাচন করেছেন। এখন এসব করা হচ্ছে ষড়যন্ত্র থেকে।’

তৃণমূলের অমত সত্ত্বেও নির্বাচনে যাওয়ার বিষয়ে জি এম কাদের বলেন, ‘তৃণমূল আমাকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব দিয়েছিল। সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আমি সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছি। এর বাইরে নির্বাচনে যাওয়ার জন্য আরও কী কী হয়েছিল, সেটা আর বলতে চাই না।’

এবারের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাপার প্রার্থী ছিলেন ২৬৫ জন। আওয়ামী লীগের সঙ্গে ২৬টি আসনে সমঝোতা করে মাত্র ১১টিতে জয় পায় জাপা। নির্বাচনে দলটির প্রার্থীদের ৯০ শতাংশই জামানত হারান। এই ভরাডুবির পর দলে বিশৃঙ্খলা দেখা হয়। এরই মধ্যে গতকাল দুজন নেতাকে অব্যাহতি দেওয়া হলো। গত শুক্রবার দলের প্রভাবশালী নেতা কো–চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশীদ ও প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভ রায়কে অব্যাহতি দেওয়া হয়।


প্রকাশক ও সম্পাদক : মো. শফিউল আজম প্রধান সম্পাদক : জায়েদ হোসাইন লাকী

রেজি : নং-ডিএ ৫০৩৪

বাণিজ্যিক কার্যালয় : ১১৫/২৩ আরামবাগ, মতিঝিল, ঢাকা-১০০০, ফোন : ০১৭৫৯-৯১৯৫২৮, ০১৬১২-১৬২৫৬৩, ইমেইল : shofiul.azam24@gmail.com

বার্তা বিভাগ : editor.aparadhsutro@gmail.com ফোন : ০১৬১২-১৬২৫৬৩, ০১৭১৬-৩৪০৮৬৩

© অপরাধ সূত্র ২০২৪ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।