নিউজ ডেস্ক | /APARADHSUTRA.COM
প্রতিবেদন প্রকাশ: ১৬ জানুয়ারি ২০২৪, সময়ঃ ০৫:২৭
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের একমাত্র ক্যাথল্যব নষ্ট হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন হাসপাতালটির ওপর নির্ভরশীল গরিব রোগীরা। প্রতিদিন ১৮০ থেকে ২০০ জন রোগী ভর্তি হন চমেক হৃদ্রোগ বিভাগে। এর মধ্যে দিনে গড়ে দুজনের অস্থায়ী পেসমেকার বসাতে হয়। এ ছাড়া সপ্তাহে জরুরি ভিত্তিতে কমপক্ষে তিনজন রোগীকে পিসিআই বা স্ট্যান্টিং (হার্টে রিং পরানো) করার প্রয়োজন পড়ে।
ক্যাথল্যাব নষ্ট থাকায় ১০ দিনের বেশি সময় ধরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এই জরুরি সেবাগুলো বন্ধ রয়েছে। গরিব রোগীরা বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন। সরকারি খাতের চেয়ে বেসরকারিতে হার্টের স্ট্যান্টিং ও এনজিওগ্রাম ব্যয় তিন থেকে চার গুণ বেশি।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হৃদ্যন্ত্রের মাংসপেশি, ভাল্ভ (কপাটিকা), ধমনির পরিস্থিতি জানতে এবং হৃদ্যন্ত্রে রক্তের চাপ বুঝতে রোগীকে ক্যাথল্যাবে পরীক্ষা করে দেখা হয়। ত্রুটি ধরা পড়লে প্রয়োজনমতো রক্তনালিতে স্টেন্ট (রিং) পরানো, পেসমেকার বসানো, সংকুচিত ভাল্ভ ফোলানো হয়।
জানা গেছে, চমেক হাসপাতালের দুটি ক্যাথল্যাব মেশিনের একটি নষ্ট হয়েছে দুই বছরের বেশি সময় আগে। অপর ক্যাথল্যাবটি চালু ছিল। দুই বছর ধরেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আরেকটি ক্যাথল্যাবের জন্য আবেদন জানিয়ে আসছিল। এসব আবেদনে অবশিষ্ট ক্যাথল্যাবটি বিকল হওয়ার ঝুঁকির কথা উল্লেখ করা হয়েছিল। হলোও তা–ই। ৪ জানুয়ারি ক্যাথল্যাবটি বিকল হয়ে যায়। এর পর থেকে ক্যাথল্যাবকেন্দ্রিক যাবতীয় সেবা বন্ধ রয়েছে। বিষয়টি স্বীকার করে বিভাগের প্রধান সহযোগী অধ্যাপক আশীষ দে বলেন, প্রায় ১০ দিন ধরে ক্যাথল্যাবটি বিকল অবস্থায় পড়ে রয়েছে। এ জন্য চিঠি দিয়ে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। একটি ক্যাথল্যাবের কারণে আগেই এনজিওগ্রাম করার জন্য রোগীদের মাসখানেক পরপর সময় (সিরিয়াল) দেওয়া হতো। এখন আরও বাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। মেরামত হলে তখন তাঁদের এনজিওগ্রাম করে দেওয়া হবে।
গত রোববার দুপুরে সরেজমিনে দেখা গেছে, বিভাগটিতে রোগীতে ভর্তি। চিকিৎসকেরা জানান, প্রতিদিন ১৮০ থেকে ২০০ রোগী থাকেন। শীতকালে রোগী আরও বেড়েছে। বিভাগের সামনে কথা হয় রফিকুল ইসলাম নামের সাতকানিয়ার এক ব্যক্তির সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আব্বাকে এখানে ভর্তি করেছি বুকে ব্যথাসহ। তিন দিন ধরে ভর্তি আছেন। এনজিওগ্রাম করার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকেরা। কিন্তু এখানে নাকি এখন হবে না। বেসরকারি হাসপাতালে করলে ২০ হাজার টাকার মতো খরচ হবে। অত টাকা জোগাড় করা কঠিন।’
হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক সাগর চৌধুরী বলেন, দুটি চিকিৎসা দ্রুত করতে হয়। তার একটি হচ্ছে টেম্পোরারি পেসমেকার বসানো এবং অন্যটি জরুরি স্ট্যান্টিং করানো। এ দুটি কাজই হচ্ছে জীবন রক্ষাকারী। এগুলো এখন বন্ধ রয়েছে। গড়ে দিনে দুজন রোগীর পেসমেকার লাগানো হতো স্বাভাবিক অবস্থায়। জরুরি স্ট্যান্টিংও হচ্ছে না।
জানা গেছে, ২০২০ সালে চমেক হাসপাতালের হৃদ্রোগ বিভাগের স্থাপন করা ক্যাথল্যাব মেশিনটি সরবরাহ করে ঢাকার মেডি-গ্রাফিক ট্রেডিং লিমিটেড নামের এক প্রতিষ্ঠান। চুক্তি অনুযায়ী মেশিনটির ওয়ারেন্টি (রক্ষণাবেক্ষণ) সময় সাত বছর। মেশিনটি এখন অকেজো হওয়ায় ৬ জানুয়ারি লিখিতভাবে হাসপাতালের পরিচালক সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে অবহিত করে।
গত রোববার সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান থেকে প্রকৌশলী এসে মেশিনটি দেখেছেন। প্রাথমিকভাবে পিকচার টিউব নষ্ট হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক রেজোয়ান রেহান বলেন, প্রকৌশলী এসে দেখছেন। দ্রুত সময়ে মেরামতের চেষ্টা করা হচ্ছে।
© অপরাধ সূত্র ২০২৪ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।