নিউজ ডেস্ক | /APARADHSUTRA.COM
প্রতিবেদন প্রকাশ: ১৬ নভেম্বার ২০২৪, সময়ঃ ১২:০৪
আমিনুল ইসলাম বাবু :
গত ২০১২ সাল থেকে একটি দালাল চক্রের ফাঁদে পরে ৭৬ জন সাধারণ মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে পরেছে। এদের কয়েকজন দেশে থেকে বিচারিক আদালতে ঘুরে বেড়াচ্ছে আর বাকিরা বিদেশের মাটিতে গুমরে কাঁদছে কাগজ পত্র হীন হয়ে দীর্ঘ ১০ বছরের অধিক সময় ধরে। ঘটনার অন্তরালে আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের প্রাক্তন এসবি প্রধান ডিআইজি মো. মনিরুল ইসলামের সহযোগিতায় সাধারণ পাসপোর্টধারী ৭৬ ব্যাক্তিকে কোন প্রকার যাচাই বাছাই ছাড়াই পাসপোর্ট অফিসের কতিপয় দুর্নীতি পরায়ণ কর্মকর্তার মাধ্যমে প্রতারক দালাল চক্রটি সরকারি অফিসিয়াল পাসপোর্ট তৈরি করে। ঘটনা সূত্রে জানা যায়, প্রতারক দালাল চক্রটি খুবই সুকৌশলে দেশের বিভিন্ন ল্যান্ড পোর্ট দিয়ে ইমিগ্রেশন কন্টাক্ট করে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে পাঠিয়ে দেয়। সেখান থেকে মুম্বাইয়ে পাঠিয়ে বিমান যোগে তুরষ্কে পৌঁছে দেওয়া হয়। ভাগ্যের অন্বেষণ বিদেশ পাড়ি দেওয়া যাত্রীগন ভারতে পৌঁছে জানতে পারে তাহাদের সরকারি অফিসিয়াল পাসপোর্ট করে বিদেশে পাঠানো হয়েছে। এ-সময় কয়েকজন যাত্রী এ-ই সরকারি অফিসিয়াল পাসপোর্টে বিদেশে যাবেনা বললে তাহাদের অনেক ভয়-ভীতি দেখানো হয় এবং তাহাদের টাকা ফেরত পাবে না কখনোই জানালে তাহারা ঐ অবৈধ পাসপোর্ট ব্যবহারে বাধ্য হয়। দালাল চক্রটি তুরস্ক সহ বিভিন্ন দেশে পাঠিয়ে ওখান থেকে যাত্রীদের পাসের গুলো কেড়ে নিয়ে ফেলে দিয়ে যায়। তাহারা অবশেষে অবৈধ অভিবাসী হিসেবে জীবন অতিবা করছে। এরা নিজ দেশে অপরাধী ও বিদেশের মাটিতে ও অবৈধ অভিবাসী হিসেবে পরিবার পরিজনহীন ভাবে বসবাস করায় মা বাবা স্ত্রী সন্তানের মৃত্যু বরণ কালেও নিজ দেশে ফিরে আসতে পারেনি।
ওইসব অবৈধ পাসপোর্টের মাধ্যমে পাসপোর্টধারীরা সরকারি কর্মচারী হিসাবে অবৈধভাবে তুরস্কসহ বিভিন্ন দেশে যান এবং পরবর্তীতে গ্রেফতার হয়ে দেশের ভাবমূর্তি চরমভাবে নষ্ট করেছেন। সরকারি এনওসিগুলো জাল ও ভুয়া জানা সত্ত্বেও তা যাচাই না করে পরিচালক মুন্সী মুয়ীদ ইকরামসহ দুর্নীতি পরায়ন কর্মকর্তাগন আর্থিকভাবে লাভবান হয়ে ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে অফিশিয়াল পাসপোর্ট ইস্যু করেছেন। যখন কোনো পাসপোর্ট তৈরি করা হয় তখন পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ এর মাধ্যমে পাসপোর্ট আবেদনকারীর তথ্য যাচাই করা নিয়ম থাকলেও এসকল আবেদনকারীর ক্ষেত্রে তৎকালীন এসবি প্রধান ডিআইজি মো. মনিরুল ইসলাম এর নির্দেশে তদন্ত রিপোর্ট প্রদান করা থেকে বিরত থাকে এসবি।
জানা গেছে, জালিয়াতির মাধ্যমে তৈরি করা ওইসব পাসপোর্ট প্রথমে সাধারণ এমআরপি হিসেবে দেওয়া হয়েছিল। পরে জাল কাগজপত্র দিয়ে সংশোধনের নামে সাধারণ পাসপোর্ট থেকে ‘অফিশিয়াল পাসপোর্ট’-এ রূপান্তর করা হয়। মানব পাচারের সঙ্গে জড়িত একটি চক্র পাসপোর্ট দফতরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশে ওইসব পাসপোর্ট তৈরি করে। প্রতিটি পাসপোর্টের জন্য নেওয়া হয় ৪ লাখ টাকা। প্রতিটি জাল পাসপোর্ট ফরম পরীক্ষা করে দেখা গেছে, সব ফরম একই হাতে লেখা।
শেরেবাংলা নগর থানা সূত্রে জানতে পারা যায় উল্লেখ্য জাল জালিয়াতি ও প্রতারণার মাধ্যমে অফিসিয়াল পাসপোর্ট তৈরি সংক্রান্তে ১০/১৪২ নং মামলা জিআর নং ১৪২/১৬ ঢাকা'র অতিরিক্ত চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-২ এ বিচারাধীন রয়েছে।
সিআইডি এর পুলিশ পরিদর্শক মো. গিয়াস উদ্দিন মামলাটির চার্জশিট প্রদান করেন ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯ তারিখ। চার্জ গঠনের পর দীর্ঘ ৭ই সেপ্টেম্বর ২০২২ তারিখ থেকে সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য ৪ মার্চ ২০২৪ পর্যন্ত আদালতে সাক্ষী প্রদান করতে উপস্থিত না থাকায় বীজ্ঞ আদালত সাক্ষীদের প্রতি ওয়ারেন্ট(NBW/W) ইস্যু করার নির্দেশ দিয়ে পরবর্তী তারিখ ১৫ মে ২০২৪ ধার্য্য করেন। এই আদেশ ও সাক্ষ্য গ্রহণের ২টি তারিখ ১৫ মে'২৪ ও ২১ অক্টোবর'২৪ অতিবাহিত হলেও চার্জশিট ভূক্ত কোন সাক্ষী সাক্ষ্য প্রদানের জন্য আদালতে হাজির হন নাই বলে মামলার আসামি উজিরপুর, বরিশালের আক্কাস শরীফের ছেলে মো: আমির হোসেন। তিনি আরও বলেন, আমরা প্রতারক চক্রের ফাঁদে পরে ভিকটিম হয়েও আসামি হয়েছি। অথচ আমাদের ফাঁদে ফেলা প্রতারক চক্রের কেহ এ মামলায় অভিযুক্ত নেই। এই প্রসঙ্গে জানতে চার্জশিট প্রদানকারী সিআইডি কর্মকর্তা, পরিদর্শক মো.গিয়াস উদ্দিন কে তাহার মুঠোফোনে ফোন দিলে তিনি ফোন রিসিভ করেন নাই।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ২৭টি দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সমঝোতা স্মারক রয়েছে। এর আওতায় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ওইসব দেশে যাওয়ার পর বিমানবন্দরেই (অনঅ্যারাইভাল ভিসা) ভিসা পেয়ে থাকেন। মানব পাচারকারীরা এই সুযোগ নিয়ে সাধারণ নাগরিকদের সরকারি কর্মকর্তা বানিয়ে বিদেশে পাচার করছেন। বিশেষ করে তুরস্ক, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, মালদ্বীপসহ কয়েকটি দেশে অনেক লোককে অফিশিয়াল পাসপোর্টের মাধ্যমে পাচার করা হয়। অনেকেই ভুয়া সরকারি কর্মকর্তা সেজে প্রথমে তুরস্ক, পরে সেখান থেকে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে চলে যান।
ঘটনা সূত্রে জানা যায়, দালাল চক্রটি খুবই সুকৌশলে দেশের বিভিন্ন ল্যান্ড পোর্ট দিয়ে ইমিগ্রেশন কন্টাক্ট করে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে পাঠিয়ে দেয়। সেখান থেকে মুম্বাই ও দিল্লিতে পাঠিয়ে বিমান যোগে তুরষ্ক সহ বিভিন্ন দেশে অনঅ্যারাইভাল ভিসায় পৌঁছে দেওয়া হয়। ভাগ্যের অন্বেষণ বিদেশ পাড়ি দেওয়া যাত্রীগন ভারতে পৌঁছে জানতে পারে তাহাদের সরকারি অফিসিয়াল পাসপোর্ট করে বিদেশে পাঠানো হয়েছে। এ-সময় কয়েকজন যাত্রী এ-ই সরকারি অফিসিয়াল পাসপোর্টে বিদেশে যাবেনা বললে তাহাদের অনেক ধরনের ভয়-ভীতি দেখানো হয় এবং তাহাদের টাকা ফেরত পাবে না কখনোই জানালে তাহারা ঐ অবৈধ পাসপোর্ট ব্যবহারে বাধ্য হয়। দালাল চক্রটি তুরস্ক, দুবাই সহ বিভিন্ন দেশে পাঠিয়ে ওখান থেকে যাত্রীদের পাসপোর্ট গুলো কেড়ে নিয়ে ফেলে দিয়ে যায় তাহাদের। তাহারা অবশেষে অবৈধ অভিবাসী হিসেবে জীবন অতিবাহিত করছে। এরা নিজ দেশে অপরাধী ও বিদেশের মাটিতে ও অবৈধ অভিবাসী হিসেবে পরিবার পরিজনহীন ভাবে বসবাস করায় মা-বাবা, স্ত্রী-সন্তানের মৃত্যু সংবাদ পেয়েও নিজ দেশে ফিরে আসতে পারেনি। তাহাদের ভবিষ্যত এখন পুরোপুরি অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে আছে। আমরা তুরস্ক থেকে গ্রীসে পালিয়ে যাওয়া দু'জন ভুক্তভোগী ফরিদপুরের কামরুজ্জামান ও দিনাজপুরের সাজ্জাদ হোসেন এর সাথে প্রবাস জীবনের গল্প শুনতে গিয়ে এ সকল হৃদয় বিদারক ঘটনা জানতে পারি। ভুক্তভোগীগণ বলেন আমরা জমি-জমা বিক্রি করে কেন এই অবৈধ ভাবে বিদেশে শ্রম বিক্রি করতে আসবো? দালাল চক্রটি আমাদের মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট জমা দিয়ে জালিয়াতির মাধ্যমে অফিসিয়াল পাসপোর্ট তৈরি করতে না পারলে কখনোই আমাদের এই পরিনতি ভোগ করতে হতো না। ভুক্তভোগীগণ আইন উপদেষ্টার মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টার নিকট এহেন ঘটনার সাথে জড়িত প্রকৃত মানব পাচারকারী চক্র, পাসপোর্ট অফিসের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা সহ সংশ্লিষ্ট ব্যাক্তিদের বিরুদ্ধে কঠিন ব্যবস্থা গ্রহন করেন যেন ভবিষ্যতে কেহ আর তাহাদের মত ভুক্তভোগীতে পরিনত না হয়, পাশাপাশি তাহাদের পাসপোর্ট আইডি আনলক করে দিয়ে নতুন পাসপোর্ট এর মাধ্যমে দীর্ঘ অভিবাসনের বৈধতা নিয়ে নিজ দেশে আত্মীয় পরিজনের নিকট ফিরে আসার সুযোগ করে দিতে অনুরোধ করেন।
© অপরাধ সূত্র ২০২৪ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।