মৌচাক মার্কেটের জুয়েলারি দোকানে ভয়াবহ চুরির ঘটনায় ৫২ভরি স্বর্ণ ও টাকা সহ ৪জনকে গ্রেফতার করেছে সিআইডি

নিউজ ডেস্ক | /APARADHSUTRA.COM

প্রতিবেদন প্রকাশ: ১০ নভেম্বার ২০২৪, সময়ঃ ০৩:৫৯


 

আমিনুল ইসলাম বাবু :

মৌচাক মার্কেটের স্বর্ণের দোকানে ভয়াবহ চুরি। সিআইডি কর্তৃক চোর চক্রের ০৪ সদস্য গ্রেফতারপূর্বক স্বর্ণ বিক্রির ০৫ লক্ষ টাকাসহ ৫২ ভরি স্বর্ণ উদ্ধার করেছে মর্মে ডিআইজি এস এন এম নজরুল ইসলাম পিপিএম আজ রবিবার দুপুরে সিআইডির মিডিয়া সেন্টারে এক প্রস ব্রিফিং এর মাধ্যমে গণমাধ্যম কর্মীদের এতথ্য জানান।

মৌচাক মার্কেট, ঢাকায় অবস্থিত আসিফ জুয়েলার্সের স্বত্বাধিকারী মোঃ আলিম উদ্দিনের দোকানে বিগত চার বছর যাবত কর্মচারী হিসেবে কাজ করে আসছিল আসামী মোঃ হিমেল মিয়া (২০)। হিমেল প্রথমে দোকানে ক্লিনার হিসেবে কাজ করতো। তিন বছর কাজের অভিজ্ঞতা ও বিশ্বস্ততার জন্য পরে তাকে উক্ত দোকানের সেলসম্যান হিসেবে নিযোগ দেওয়া হয়।

হিমেল দোকানের সেলসম্যান হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পরই স্বর্ণ চুরি করার অসৎ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের পরিকল্পনা করে এবং সুযোগের অপেক্ষায় থাকে। তার এ পরিকল্পনার কথা বন্ধু মহলে আলাপ করলেও বন্ধুরা তাকে এই কাজ করতে নিষেধ করে। পরবর্তীতে হিমেল স্বর্ণ চুরির বিষয়টি নিয়ে পূর্বপরিচিত ফারজানা আক্তার ইতি(২৭) ও ইতির স্বামী মাশফিক আলম(২৮) এর সাথে আলোচনা করে এবং একসাথে বেশি স্বর্ণ হাতে পেলে তারা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবে মর্মে একমত হয়।

আসিফ জুয়েলার্সের মালিক ও ম্যনেজার প্রায়ই হিমেলকে স্বর্ণের কাজ করানোর জন্য পাশের আনারকলী মার্কেটের কারখানায় স্বর্ণ দিয়ে পাঠাতেন এবং কাজ শেষ করে হিমেল স্বর্ণ দোকানে ফেরত নিয়ে আসতো। ঘটনার দিন ৩০ অক্টোবর বুধবার, হিমেলকে স্বর্ণ নিয়ে আসার জন্য কারখানায় পাঠানো হয়। হিমেল কারখানা থেকে আনুমানিক ৫৯ ভরি স্বর্ণ নিয়ে দোকানে না এসে পূর্বপরিকল্পনা মতো পালিয়ে গিয়ে চক্রের অন্যতম সদস্য মাশফিকের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করে তার পরামর্শেই মাশফিকের বাসায় তার স্ত্রী ইতির কাছে যায় এবং এর পর থেকে মোবাইল ফোন বন্ধ করে পলাতক হয়।

পরবর্তীতে একই দিনে চতুর হিমেল কৌশল অবলম্বন করে ৩৩ ভরি স্বর্ণ নিজের নিকট রেখে দিয়ে চক্রের অন্য সদস্যদের জানায় সে ২৫ ভরি স্বর্ণ সে চুরি করতে সক্ষম হয়েছে। হিমেল স্বর্ণসহ ইতির বাসায় পৌঁছানোর পর ইতিকে ২৫ ভরি স্বর্ণের বারটি রাখার জন্য দেয়। এরপর ইতি হিমেল কে সঙ্গে করে উত্তরা নিয়ে ময়মনসিংহের উদ্দেশ্যে বাসে উঠিয়ে দেয় এবং ইতির বাবা আব্দুর জব্বার কে ফোন করে বলে হিমেল কে রিসিভ করে ময়মনসিংহ সদরে তাদের বাসায় রাখার জন্য।

দোকানে না আসায় এবং হিমেলের সাথে যোগাযোগ করতে ব্যর্থ হওয়ায় আলিমুদ্দিন নিশ্চিত হন যে হিমেল স্বর্ণ চুরি করে পালিয়েছে। অতঃপর উক্ত ঘটনায় আসিফ জুয়েলার্সের মালিক আলিমুদ্দিন বাদী হয়ে রমনা থানায় একটি চুরির মামলা দায়ের করেন এবং সিআইডি'র কাছে স্বর্ণ উদ্ধারের উদ্দেশ্যে একটি অভিযোগ প্রদান করেন। অভিযোগ প্রাপ্তির পর সিআইডি ছায়া তদন্ত শুরু করে এবং তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে আসামীদের সনাক্ত করার কাজ শুরু করে।

ইতোমধ্যেই পরিবেশ পরিস্থিতি বুঝে আসামী মাশফিক তার স্ত্রী ইতির নিকট রাখা স্বর্ণের বার নিয়ে ময়মনসিংহ সদরে মাশফিকের শ্বশুর আব্দুর জব্বার এর নিকট যায়। যাতে তারা ধরা না পরে সে জন্য আব্দুল জব্বার, হিমেল ও মাশফিক স্বর্নের বারটি টুকরো টুকরো করে বিক্রি করার পরিকল্পনা করে এবং স্বর্নের বারটিকে তিনটি টুকরা করে। সেখান থেকে একটি টুকরা (৭ ভরি) নিয়ে মাশফিক ময়মনসিংহের স্থানীয় স্বর্ণের দোকানে স্বর্ণ বিক্রি করে ৮ লক্ষ ১০ হাজার টাকা পায়।

পরবর্তীতে উক্ত টাকা হতে হিমেল নিজের জন্য একটি iPhone 15 Pro, মাশফিক নিজের জন্য vivo v40 এবং ইতির জন্য একটি Honor 8xb মোবাইল এবং নিজেদের জন্য জামা-কাপড় ক্রয় করে। মাশফি অবশিষ্ট টাকা, ১৯ ভরি স্বর্ণ ও প্রায় ৪,৬১,৫০০ টাকা নিয়ে ঢাকায় ফিরে তার স্ত্রী ইতির নিকট রেখে কক্সবাজার আত্মগোপনে চলে যায়। সাইবার পুলিশ সিআইডির একটি চৌকস টিম তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় মাশফিকের কক্সবাজারে অবস্থান সনাক্ত করে অভিযান পরিচালনা করে তাকে গ্রেফতার করে, গ্রেফতারকালে তার নিকট হতে স্বর্ণ বিক্রির ২৭ হাজার টাকা ও ৬৩,০০০/- টাকা মূল্যের একটি vivo v40 মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।

এরপর মাশফিকের দেওযা তথ্য মতে মাশফিকের স্ত্রী ফারজানা আক্তার ইতিকে রামপুরা মৌলভীটেকের বাসা হতে গ্রেফতার করা হয়, গ্রেফতারকালে ইতির বাসার ডিপ ফ্রিজের ভেতর থেকে দুটি স্বর্ণের টুকরা (১৯ ভরি) এবং স্বর্ণ বিক্রির ৪ লক্ষ ৬১ হাজার ৫০০ টাকা উদ্ধার করা হয়। ইতির দেওযা তথ্য মতে পরবর্তীতে ময়মনসিংহে অভিযান করে ইতির পিতা আব্দুর জব্বার(৭০)কে গ্রেফতার করা হয়। আব্দুল জব্বারকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় আসিফ জুয়েলার্স এর কর্মচারী আসামী হিমেলকে সে তার ভাতিজার গৌরীপুরের বাসায় লুকিয়ে রেখেছে।

সাইবার পুলিশের অন্য একটি টিম বোকাইনগর, গৌরিপুর, ময়মনসিংহ এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে হিমেলকে গ্রেফতার করে এবং তার নিকট হতে ৩৩ ভরির একটি স্বর্ণের বার এবং স্বর্ণ বিক্রির টাকায় ক্রয়কৃত ১,১৫,০০০/- টাকা মূল্যের iPhone 15 Pro মোবাইল উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। জিজ্ঞাসাবাদে আসামীরা তাদের অপরাধের কথা স্বীকার করেছে। বর্তমানে মামলাটি সাইবার পুলিশ সেন্টার, সিআইডির নিকট তদন্তাধীন আছে।


প্রকাশক ও সম্পাদক : মো. শফিউল আজম প্রধান সম্পাদক : জায়েদ হোসাইন লাকী

রেজি : নং-ডিএ ৫০৩৪

বাণিজ্যিক কার্যালয় : ১১৫/২৩ আরামবাগ, মতিঝিল, ঢাকা-১০০০, ফোন : ০১৭৫৯-৯১৯৫২৮, ০১৬১২-১৬২৫৬৩, ইমেইল : shofiul.azam24@gmail.com

বার্তা বিভাগ : editor.aparadhsutro@gmail.com ফোন : ০১৬১২-১৬২৫৬৩, ০১৭১৬-৩৪০৮৬৩

© অপরাধ সূত্র ২০২৪ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।