নিউজ ডেস্ক | /APARADHSUTRA.COM
প্রতিবেদন প্রকাশ: ১৭ জানুয়ারি ২০২৪, সময়ঃ ০৩:৫৫
চলতি বোরো মৌসুমে সিলেটের চার জেলায় অকাল বন্যা ও পাহাড়ি ঢল থেকে বোরো ফসল রক্ষায় ‘হাওর রক্ষা’ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের এক মাস অতিবাহিত হলেও সুনামগঞ্জে হাওরে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণে এখনো ৪০০ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়নি। বিধি মোতাবেক হাওরে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণকাজের সময়সীমা ১৫ ডিসেম্বর থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। এতে হাওর পাড়ের কৃষক ও ‘হাওর বাঁচাও’ আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। অবশ্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী খুশি মোহন সরকার সোমবার সন্ধ্যায় ইত্তেফাককে জানান, তিনি গত কয়েক দিনে তাহিরপুর, মধ্যনগর, জামালগঞ্জ, জগন্নাথপুর ও শান্তিগঞ্জ উপজেলায় হাওর রক্ষা বাঁধ এলাকা পরিদর্শন করে সংশ্লিষ্টদের দ্রুত কাজ শুরুর নির্দেশনা দিয়েছেন। আশা করি নির্দিষ্ট সময় কাজ শেষ হবে, বলেন এই কর্মকর্তা।
প্রতি বোরো মৌসুমে সিলেটের বোরো প্রধান সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, সিলেট ও মৌলভীবাজার থেকে প্রতি বোরো মৌসুমে প্রায় ২০ লাখ মেট্রিকটন ধান কৃষকের গোলায় ওঠে। আসাম ও মেঘালয়ের পাদদেশে অবস্থিত এই অঞ্চলটি অনেকটাই প্রকৃতিনির্ভর। বর্ষায় অতি বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে এই এলাকায় ফসল ডুবির ঘটনা ফি-বছর। তাই বিশাল এই খাদ্যভাণ্ডার রক্ষায় হাওর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়।
চলতি মৌসুমে চার জেলার হাওর রক্ষা প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ হয়েছে ১৩৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বোরো এলাকা সুনামগঞ্জ জেলার জন্য বরাদ্দ ১২৪ কোটি টাকা। সূত্র জানায়, পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৭৩৩টি প্রকল্পের মধ্যে ৩২৪ টিতে কাজ চলছে। বাঁধ নির্মাণের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা কাজের অগ্রগতি ১০ শতাংশ দাবি করলেও ’হাওর বাঁচাও’ সংগঠনটির নেতারা বলছেন ভিন্ন কথা। তারা বলেছেন, কাজে ঢিলেমি ও অনিয়মের কারণে এখনো ৮০ ভাগ প্রকল্পের কাজই শুরু হয়নি। তবে জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন কর্মকর্তারা বলছেন, সংসদ নির্বাচন, হাওর থেকে পানি ধীরে নামা ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) গঠনে রাজনৈতিক চাপ ও নানা অভিযোগের কারণে কোনো কোনো স্থানে কাজ শুরু করতে কিছুটা বিলম্ব হয়।
সুনামগঞ্জের হাওরে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণসংক্রান্ত জেলা কমিটির সভা সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত হয় রবিবার। জেলা কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরীর সভাপতিত্বে বাঁধ নির্মাণের সর্বশেষ অবস্থা তুলে ধরেন সদস্যসচিব ও সুনামগঞ্জ পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মামুন হাওলাদার। জেলা প্রশাসক কমিটির সদস্যদের বক্তব্য ও ক্ষোভ শুনে আগামী দুদিনের মধ্যে সব পিআইসি গঠন ও প্রকল্পের কাজ শুরুর নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, কাজে গতি বাড়াতে হবে, এর কোনো বিকল্প নেই। একই সঙ্গে তদারকি বাড়ানোর নির্দেশনা দিয়েছেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার জানান, রবিবার পর্যন্ত ১২টি উপজেলায় ৭৩৩টি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। পিইসি গঠন হয়েছে ৭০৭টিতে। কাজ চলছে ৩২৪টি প্রকল্পে। বাঁধগুলোর মধ্যে ১৬৪টি ক্লোজার ঝুঁকিপূর্ণ আছে। এর মধ্যে ৫৪টি ক্লোজারে কাজ শুরু হয়েছে। বিভিন্ন প্রকল্পের অগ্রগতি জানিয়ে তিনি বলেন, সদর উপজেলায় ২৮টি প্রকল্পের মধ্যে ১৭টিতে কাজ শুরু হয়েছে।
সভায় উপস্থিত ‘হাওর বাঁচাও’ আন্দোলন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক বিজন সেন রায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, পাউবোর হিসাবের সঙ্গে মাঠের কোনো মিল নেই। তাই নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ হবে কিনা সংশয় রয়েছে। কমিটির সদস্য জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আলী আমজাদ বলেন, সুনামগঞ্জের মানুষ একটি মাত্র বোরো ফসলের ওপর নির্ভরশীল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ফসলের খোঁজ নেন। তাই কাজে যেন কোনো অবহেলা না হয়। তা হলে এলাকাবাসী বিষয়টি মেনে নেবে না। সভায় পিআইসি গঠনে রাজনৈতিক চাপের কথা উলেখ করেন তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সালমা পারভীন। তিনি বলেন, এটি যেমন আছে, তেমনি পিআইসি নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে অভিযোগেরও শেষ নেই। কেউ কেউ আছে নিজে কাজ না পেলে অনিয়মের অভিযোগ তোলে। দিরাই উপজেলার দায়িত্বে থাকা পাউবোর শাখা কর্মকর্তা আবদুল মোনায়েম বলেন, নির্বাচনের কারণে কাজে বিলম্ব হয়েছে। এখন দ্রুত কাজ করবেন তারা। তাহিরপুরের শাখা কর্মকর্তা মনির হোসেন বলেন, পিআইসি নিয়ে দলাদলি আছে।
জামালগঞ্জের শাখা কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম বলেন, কোনো কোনো হাওরে এখনো পানি থাকায় কাজ শুরু করা যাচ্ছে না। তবে বৃহস্পতিবারের মধ্যে সব প্রকল্পে কাজ শুরু করবেন বলে জানান। সভায় অন্যান্যের মধ্যে স্থানীয় সরকার বিভাগের সুনামগঞ্জের উপপরিচালক দেওয়ান মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, সুনামগঞ্জ পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী (পওর বিভাগ-২) মো. শামসুদ্দোহা, সদরের ইউএনও মৌসুমী মান্নান, শান্তিগঞ্জের ইউএনও সুকান্ত সাহা, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু সুফিয়ান।
সূত্র জানায়, সুনামগঞ্জের ছোটবড় ৯৫টি হাওরে প্রতিবছর সোয়া ২ লাখ হেক্টরের মতো জমিতে বোরো আবাদ হয়। এসব হাওরে ১ হাজার ৭১৮ কিলোমিটারের মতো বেড়িবাঁধ আছে। পাউবো ৪০টি হাওরে কাজ করে। একটি পিআইসি সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকার কাজ করতে পারে।
© অপরাধ সূত্র ২০২৪ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।