উপকূলে জলচর পাখিশুমারি

Shafiul
প্রতিবেদন প্রকাশ: ১৬ জানুয়ারি ২০২৪ | সময়ঃ ০৫:৫৮
photo

অপরাধ সূত্র :

বছরের প্রথম দিন থেকেই পাখি গণনার কাজ শুরু হলো উপকূলে। এ দেশে প্রতিবছর জলচর পাখিশুমারি হয়। জনশুমারির মতো পাখিশুমারিও খুব গুরুত্বপূর্ণ। জানুয়ারি মাসজুড়ে পৃথিবীব্যাপী একসঙ্গে পাখি গণনার কাজ চলে। শুমারির ফলাফল থেকে জানা যায়, পাখি ও তার বিচরণ এলাকার ভালো অথবা মন্দ অবস্থা। প্রজননকাল শেষে পরিবারের নতুন অতিথিদের অবস্থা কেমন আছে, তা-ও বোঝা যায় গণনা করে।

তিন যুগ ধরে আমাদের উপকূলে পাখিশুমারি হয়ে আসছে। ভোলা, নোয়াখালী, পটুয়াখালী আর বরগুনার প্রত্যন্ত চরাঞ্চলে এই পাখিশুমারি হয়। কোনো বছরই এই গণনা বাদ যায়নি। আর এর মধ্যে প্রায় দুই যুগ ধরে পাখিশুমারি দলের সদস্য হিসেবে নিয়মিত গণনায় অংশ নিচ্ছি।

চোখের সামনে পাখির অনেক প্রজাতিসহ বেশ কিছু আবাসস্থল হারিয়ে যেতে দেখেছি। এই যেমন ধরুন, ভোলার চর শাহজালাল আর নোয়াখালীর দমার চর। একসময় উপকূলের এই দুটি চরে হাজার হাজার পরিযায়ী পাখির বিচরণ ছিল। এখন মানুষের অত্যাচারে এই দুই চরেরই সোনালি অতীত হারিয়ে গেছে।

এ বছর ১০ দিনব্যাপী উপকূলজুড়ে প্রায় ৪৭টি এলাকা বা চরে পাখিশুমারি হয়। শেষ হয় জানুয়ারির ১১ তারিখ। শুমারি দলের নেতৃত্ব ছিলেন পাখি গবেষক বন্ধু সায়েম চৌধুরী। তাঁর সঙ্গে ছিলেন এম এ মুহিত। তিনি উপকূলে সব পাখিশুমারিতেই অংশ নিয়েছেন। এবার পাখি গণনা শেষে দেখা গেল, উপকূলে এসেছে ৬২টি প্রজাতির ৩৪ হাজার ৩১২টি পাখি। পাখির সংখ্যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ৩৭ শতাংশ কম। কেন পাখির সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে, এ বিষয়ে বড় গবেষণা দরকার। তবে গত বছরের তুলনায় এ বছর এক সপ্তাহ আগে পাখিশুমারি শুরু হয়েছে। অন্যদিকে পাখির আবাসস্থলও বেশ সংকুচিত হয়েছে বলে মনে হচ্ছে।


উপকূলের পাখিশুমারির বড় খবর হলো, এ বছর দেখা মিলেছে বৈকাল তিলাহাঁসের। গত তিন যুগের পাখিশুমারির মধ্যে দ্বিতীয়বারের মতো দেখা গেল এই পাখি। পাখিশুমারির শেষ দিনে প্রজাতিটি দেখা গেছে ভোলার টেগরার চরে। আর হতাশার খবর হলো, পুরো এলাকায় মাত্র একটি চামচঠুঁটো বাটান পাখির দেখা মিলেছে সন্দ্বীপের কাছে গাঙ্গুরার চরে। বিপন্ন দেশি গাঙচষার সংখ্যাও দিন দিন কমে যাচ্ছে। একসময় এই পাখির দেখা মিলত দমার চর এলাকায়। এ বছর শুধু দেখা পাওয়া গেছে সন্দ্বীপের কাছে জাইজ্জার চরে, ১ হাজার ২০০টি। এ ছাড়া ধূসর রাজহাঁস নামের এ দেশে সবচেয়ে বড় রাজহাঁস দেখা গেছে ৯০০টি।

পাখিশুমারি দলের অন্যতম সদস্য হলেন মোহাম্মদ ফয়সাল। তাঁর পর্যবেক্ষণে এ বছর সবচেয়ে বেশি পাখির বৈচিত্র্য ছিল জাইজ্জার চর আর সোনার চর বন্য প্রাণী অভয়ারণ্যের পাশের আরেকটি কাদাচরে। চরটির নাম ডিমের চর। অন্যান্য চরের অবস্থা খুব বেশি ভালো নয়। মানুষের বিচরণ এসব চরে দিন দিন বাড়ছে। বিশেষ করে গরু-মহিষের বিচরণ বেড়েছে বহুগুণে। এ ছাড়া অনেক কাদাচরে বনায়ন হওয়ার ফলে কাদাচরগুলো হয়ে উঠেছে সবুজ বনাঞ্চল। তাই কাদাচরের ওপর নির্ভরশীল পাখিগুলো তাদের বিচরণস্থল বদল করেছে।

উপকূল ছাড়াও এ দেশের প্রায় আরও ৩২টি অঞ্চলে পাখি গণনার কাজ চলবে শীতজুড়ে। এ কাজের সঙ্গে যুক্ত আছেন বাংলাদেশে বার্ড ক্লাব, আইইউসিএন আর বন অধিদপ্তরের একদল গবেষক। গণনা শেষে এর ফলাফল প্রকাশিত হয় ওয়েটল্যান্ড ইন্টারন্যাশনালের ওয়েবসাইটে।

একটি সমৃদ্ধ উপকূলের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো কাদাচর। আর এই কাদাচরে ঝাঁকে ঝাঁকে পাখির দল খাবার খোঁজে। আমাদের একটি বৃহৎ উপকূল আছে, তবে সেই উপকূলে কমে যাচ্ছে পাখির সংখ্যা। সরকারিভাবে পাখিশুমারির গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো খুব বেশি বিবেচনায় নেওয়া হয় না। অথচ এই শুমারির ফলাফল দেখেই সংরক্ষণের অনেক সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে। উপকূলজুড়ে সব পরিযায়ী ভালো থাক, এই কামনা করি।

  • নিউজ ভিউ ৩৬