সাতক্ষীরা ভোমরা বন্দর সিএন্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের কমিটি গঠন

Shafiul
প্রতিবেদন প্রকাশ: ১৯ আগস্ট ২০২৪ | সময়ঃ ১২:০০
photo

অপরাধ সূত্র :

 

হাবিবুল্লাহ বাহার হাবিব

আওয়ামী ও পুলিশ লীগের মনোনীত ভোমরা স্থলবন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা আত্মগোপনে রয়েছেন। মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে আওয়ামী লীগ ও পুলিশলীগের পছন্দের কমিটির সভাপতি ছিলেন কাজী নওশাদ দেলোয়ার  রাজু ও সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ খান। ৯ সদস্যের এই কমটি ২০২২ সালে দায়িত্ব নিয়ে বন্দরের ব্যবসায়ীদের একপ্রকার জিম্মি করে চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপকর্মে লিপ্ত হয় বলে অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতা, প্রশাসনের বিভিন্ন কর্মকর্তাদের  নগদে খুশি রেখে বন্দরে গড়ে ওঠে সিন্ডিকেট। একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিলেও পুলিশ- প্রশাসনের ভয় ও আওয়ামীলীগের নেতা কর্মীদের হুমকি ধামকিতে কোন ব্যবসায়ী মুখ খুলতে সাহস পাননি। ভারত থেকে আমদানিকৃত গাড়ি প্রতি চারশ টাকা চাঁদা আদায় করাসহ নানানভাবে হয়রানি করা হয়েছে ব্যবসায়ীদের। গাড়ি পার্কিং থেকে শুরু করে সকল পর্যায়ে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে দফায় দফায় চাঁদা আদায় করা হয়েছে। প্রতি মাসে আদায়ের কোটি কোটি টাকার ভাগ দেওয়া হতো পুলিশ,এমপিসহ আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনের নেতাদের।  এছাড়া, দেশের দূর দূরন্ত থেকে ভোমরা স্থলবন্দরে আসা ব্যবসায়ীদের শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করা হতো। তাদের কাছ থেকে আদায় করা হতো মোটা অংকের চাঁদার টাকা।  এমনকি চিটাগাং এর এক ব্যবসায়ীকে আটকে রেখে অমানবিক নির্যাতন চালানোর ঘটনায় সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ খানকে কিছুদিন জেলও খাটতে হয়েছে। তবে, গত জুলাইয়ের  ছাত্র- জনতার আন্দোলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সাথে সাথেই সাতক্ষীরার আওয়ামী লীগের সকল এমপি ও নেতাকর্মীদের মতো ভোমরা সিএন্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রাজু ও  সম্পাদক মাকসুদ পালিয়ে গেছেন বা আত্মগোপনে রয়েছেন। কমিটির অন্যান্য কর্মকর্তা, সদস্যরাও কার্যালয়ে না আসায় ব্যবসায়ী কার্যক্রম মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত ও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সাধারণ ব্যবসায়ীরা গত ৭ আগষ্ট বিশেষ জরুরি সভার আহ্বান করেন। এই সভায় সর্বসম্মতিক্রমে 
ভোমরা সিএন্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক কমিটি গঠিত হয়। পাঁচ সদস্যের এই কমিটির আহ্বায়ক হয়েছেন অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি হাবিবুর রহমান হাবিব। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন -  অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অহিদুল ইসলাম,মুন্সী রাইসুল হক টুকু,পারুলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম ফারুক বাবু ও ভোমরা ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান আসাদুর রহমান।
এবিষয়ে বন্দরের একাধিক ব্যবসায়ী  বলেন, বন্দরটিকে বাঁচাতে ব্যবসায়ীদের সর্বসম্মতিক্রমে গত ৭ আগষ্ট  অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক কমিটি গঠন হয়েছে। আওয়ামী লীগ পুষ্ট বিগত কমিটির  নেতারা অ্যাসোসিয়েশনের কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে লাপাত্তা হয়েছেন। তাদের কোনো খোঁজ মিলছে না। তাঁরা বলেন, স্বাধীন গণতান্ত্রিক এই প্রতিষ্ঠানে ২০১৭ সালের পর থেকে আর নির্বাচন হয়নি। জাতীয় নির্বাচনের মতো আমরা ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত। দীর্ঘদিন আওয়ামীলীগের দলীয় করণে তাদেরই মন পছন্দ লোক দিয়ে সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে অ্যাসোসিয়েশন দখল করে বন্দর পরিচালনা করেছেন। ঘুরে ফিরে আওয়ামী লীগের লোকজনই অ্যাসোসিয়েশন দখল করেছে। চাঁদাবাজি করেছেন। এমনকি মাঝখানে আওয়ামী লীগের এক দরবেশ বাবাও কয়েক মাস বন্দর লুঠে খেয়েছেন , দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে এমনভাবেই বললেন কয়েকজন ব্যবসায়ী।
তারা বলেন, সব শেষ ২০২২ সালে পরিকল্পনামাফিক সাধারণ সভার নামে নির্বাচনি তফসিল ঘোষণা করে মনোনয়ন পত্র কিনতে দেয়নি পুলিশ  ও আওয়ামী লীগ। পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতারা প্রকাশ্যে ভয় দেখিয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করে রাজু-মাকসুদসহ পছন্দের লোকদের অ্যাসোসিয়েশনের কমিটি গঠন করেছে। আওয়ামীলীগের মদতপুষ্ট এই কমিটির কাছ থেকে দুই কোটির অধিক টাকা নিয়েছে পুলিশ, আওয়ামী লীগ, ছাত্র লীগ ও যুবলীগের জেলার শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা। 
কোটি কোটি টাকা দিয়ে কেনা  এই কমিটি দীর্ঘদিন 
ব্যবসায়ীদের জিম্মি করে ইচ্ছে মতো হয়রানি ও চাঁদাবাজি করেছেন। যে কারণে অনেক ব্যবসায়ী বেনাপোলসহ দেশের অন্য বন্দরে চলে গেছেন। বর্তমানে ভোমরা স্থলবন্দরে আমদানি-রপ্তানি সর্বনিম্নের কোঠায়। ব্যবসা সেভাবে না থাকায়  সরকারের রাজস্ব আয় কমে গেছে বলছিলেন ভোমরা স্থলবন্দরের ব্যবসায়ী বৃন্দ।
নবগঠিত কমিটির আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান হাবিব  বলেন,সকল ব্যবসায়ীদের স্বার্থ সংরক্ষণ,রাজস্ব আয় বৃদ্ধি, যেসকল ব্যবসায়ীরা অন্য বন্দরে চলে গেছেন তাঁদের ফিরিয়ে নিয়ে আসা ও অ্যাসোসিয়েশনের  সকল সদস্যদের নিয়ে সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে কাজ করা হবে। আওয়ামী লীগ দ্বারা হরণকৃত বাক স্বাধীনতা ও ভোটের স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনতে বর্তমান কমিটি কাজ করছে। এবিষয়ে তিনি সকলের সহযোগিতা চেয়েছেন।
এদিকে, পলাতক বা আত্মগোপনে থাকা কাজী 
নওশাদ দেলোয়ার রাজু ও মাকসুদ খানের বক্তব্য নেওয়ার জন্য একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তা সম্ভব হয়নি।
উল্লেখ্য, ১৯৯৬ সালে সাতক্ষীরার ভোমরা শুল্ক স্টেশন চালু হয়। এরপর ২০০২ সালে শুল্ক স্টেশনকে স্থলবন্দর হিসেবে সরকার ঘোষণা করেন। বন্দরটি কলকাতার কাছাকাছি হওয়ায় দেশের অনেক আমদানি-রপ্তানিকারক এই বন্দরে ব্যবসার জন্য এসেছিলেন । কিন্তু নানান অনিয়ম, হয়রানি, চাঁদাবাজির কারণে বহু ব্যবসায়ী দেশের অন্য বন্দরে চলে গেছেন।

  • নিউজ ভিউ ২৩০